Saturday, December 13, 2014

শীতে স্বাস্থ্য সমস্যার ডাক্তারের পরামর্শ


আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন বন্ধুরা সবাই।আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালই আছি।শীতে  কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতেই পারে, কোনও কোনও সমস্যা ফুসে উঠে তাপমাত্রা কমে গেলে স্বাস্থ্যের কিছু ঝুঁকি বেড়েও যায়। শীতের এসব অসুখ মোকাবেলায় শরীরকে সাহায্য করার আছে উপায়।

ঠান্ডা লাগা

নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করলে ঠান্ডা সর্দি বেশ প্রতিরোধ করা যায়। ঠান্ডা সর্দি হয়েছে এমন সব লোক ছুয়েছেন এমন সব স্থান ও জিনিস যেমন বৈদ্যুতিক বাতির সুইচ, দরজার হাতল, এতে হাত লাগলে তা ধুয়ে ফেললে বারবার সর্দির জীবানু সংক্রমণ হতে রক্ষা পাবে সহজে। ঘরে কোনও লোক অসুখ থাকলে কাপ, গ্লাস, টাওয়েল সব পয়পরিষ্কার রাখা উচিত।

টিপস: ঠান্ডা লাগলে, সর্দি হলে, কাপড়ের রুমাল ব্যবহার না করে ডিসপোজেল টিসু ব্যবহার করা উচিত। এতে হাত অনবরত পুন:সংক্রমণ থেকে বাঁচবে।

গলা খুসখুস, গলা ব্যথা

গলা খুসখুস, গলাব্যথা শীতকালে বেশ সচরাচর এবং প্রায়শ তা ভাইরাস সংক্রমণ। এমন তথ্য প্রমাণ আছে, তাপমাত্রার পরিবর্তন যেমন উষ্ণ ঘর থেকে হিমশীতল বাহিরে গেলে গলা খুসখুস এবং গলা ব্যথা হতে পারে।

টিপস: গলা খুসখুসের সহজ একটি নিদান হলো উষ্ণ লোনাপানি দিয়ে গড়গড়া করা। এতে  সংক্রমণ নিরাময় হয়না বটে তবে এর রয়েছে প্রদাহরোধী গুণ এবং উপশম করার মত গুণ।  কুসুম গরম একগ্লাস পানি এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন।

হাঁপানি

হিমশীতল বাতাসে হাঁপানি বাড়ে, শুরু হয় বুকে সাঁ সাঁ শব্দ ও শ্বাসকষ্ট। যাদের হাঁপানি আছে তাদের শীতকালে সতর্ক থাকা উচিত।

টিপস: খুব শীতল, হিমবাতাস যেদিন, সেদিন ঘরে থাকুন। যদি বাইরে যেতেই হয় তাহলে নাক ও মুখে স্কার্ফ বেধে নিন। নিয়মিত ওষুধ নেবেন। বিশেষ খেয়াল করতে হবে সেদিকে। জীবন রক্ষাকারী ইনহেলার রাখুন হাতের কাছেই।

ভাইরাস

শীতকালের খুব দুষ্ট ও সংক্রামক ভাইরাস, পাকস্থলী ভাইরাস। সারাবছর এর গতি অগ্রতিহত থাকে। শীতকালে বড় তীব্র হয়। হোটেলে ও বিদ্যালয়ে এর গতিবিধি বেশি। বড় অপ্রীতিকর অসুখ, দু’তিন দিন কষ্ট।

টিপস: অসুখ হয় বমি ও তরল মল, পানিশূন্যতা ঠেকাতে খেতে হয় প্রচুর পানি ও তরল। ছোট বাচ্চা ও বুড়োদের ঝুঁকি বেশি। মুখে খাবার স্যালাইন খেলে এসব সমস্যা ঠেকানো যায়।

বেদনার্ত হাড়ের গিট

যাদের আথ্রাইটিস আছে এদের অনেকেই অভিযোগ করেন, শীতকালে হাড়ের গিটগুলোতে ব্যথা খুব বাড়ে, কেন তা বাড়ে জানা নেই। হাড়ের গিটের সমস্যা যেমন ব্যথা ও নিশ্চলতা আবহাওয়াতে প্রভাবিত হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনে হাড়ের ক্ষতি বা গিটের ক্ষতি হয় এমন প্রমাণ নেই।

টিপস: অনেকে শীতের দিনগুলোতে কিছুটা বিষন্ন হয়ে পড়েন তাই এদের ব্যথা বেদনার অনুভব বেশি। সব কিছু খারাপ লাগে। এমনকি অসুখও। নিত্য দিন ব্যায়ামে শরীর ও মন ভালো হয়। সাতার কাটা উত্তম। হাড়ের গিটের জন্য আরো ভালো।

হিমক্ষত

আমাদের শরীর খারাপ বা চাপগ্রস্ত এমন হলেই হিমক্ষত হয় মনে করি আমরা। হিমক্ষতের কোনও নিরাময় নেই, তবে শীতে নিজের দেখভাল করলে একে ঠেকানো যায়।

টিপস: প্রতিদিন এমন সব কাজ করা উচিত যাতে মনে চাপ পড়ে কম, চাপ হয় কম, চাপ হ্রাস পায় যাতে যেমন উষ্ণ ধারা পানিতে গোসল, পার্কে হাটুন, নয়ত প্রিয় কোনও ছবি দেখুন হলে বসে।

হার্ট এ্যাটাক

শীতকালে হার্ট এ্যাটাকের ঘটনা বেশি হয়। শীতের ঝাপটায় বাড়ে রক্তচাপ, চাপ পড়ে হূদযন্ত্রের উপর। শীতকালে দেহতাপ রক্ষার জন্য হূদযন্ত্র আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।

টিপস: ঘরের ভেতর উষ্ণ গরমে থাকুন। শোবার ঘরে যেন তাপমাত্রা থাকে ২১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। গরম পানির বোতল বা ইলেকট্রিক ব্ল্যাংকেট ব্যবহার করা যায় শয্যা গরম থাকার জন্য। বাইরে যেতে হলে গরম কাপড় পরে যেতে হয়, পরুন মাথায় হেট, স্কার্ফ ও গ্লোবস্।

হিমশীতল হাত

শীতের আবহাওয়ায় হাতের আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুলগুলো অত্যন্ত বেদনার্ত হয়। আঙ্গুলগুলো প্রথমে সাদাবর্ণ হয় এর পরে নীল এর পর রক্তবর্ণ। দপদপ করতে থাকে। ঝিনঝিন করে। হাত ও পায়ের ক্ষুদ্র রক্তনালীতে রক্ত চলাচল কমে যায়। গুরুতর ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হতে পারে, তবে এই অষুখ নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।

টিপস: ধূমপান অবশ্য নয়। চা কফি ও ক্যাফিনও বর্জন। এতে বাড়ে উপসর্গ। সব সময় হাতে উষ্ণ মোজা পড়া, পায়েও মোজা ও জুতো পরা উচিত বিশেষ করে বাইরে যাবার সময়।

শুষ্কত্বক

সচরাচর শীতের সময় বাড়ে ত্বকের শুষ্কতা, আবহাওয়ায় আর্দ্রতা যখন কমে আসে। শীতকালে চাই আর্দ্রকরণ। ময়েশ্চারাইজিং। স্নানের পর বা শাওয়ারের পর ময়শ্চরাইজার লাগানো উত্তম। আবার শয্যা গ্রহণের আগে।

টিপস: উষ্ণ শাওয়ারের চেয়ে কুসুম গরম শাওয়ার ভালো। খুব গরম জল ত্বক আরো শুষ্ক ও চুলকানি হয়। চুলও শুষ্ক ও ফ্যাকাশে হয়।

শীতকালীন ফ্লু

ঋতুকালীন ফ্লূ ভঙ্গুর লোকের জন্য প্রাণসংশয়ী হতে পারে। ৬৫ উর্দূ লোক এবং যাদের ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ এদের ঝুঁকি খুব বেশি। তাই সিজন্যাল ফ্লু শট নেয়া উত্তম। সুরক্ষাও পাওয়া যায় ১ বছর।

 অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা
 ধন্যবাদ সবাইকে।

Unknown

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment

0

আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন বন্ধুরা সবাই।আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালই আছি।শীতে  কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতেই পারে, কোনও কোনও সমস্যা ফুসে উঠে তাপমাত্রা কমে গেলে স্বাস্থ্যের কিছু ঝুঁকি বেড়েও যায়। শীতের এসব অসুখ মোকাবেলায় শরীরকে সাহায্য করার আছে উপায়।

ঠান্ডা লাগা

নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করলে ঠান্ডা সর্দি বেশ প্রতিরোধ করা যায়। ঠান্ডা সর্দি হয়েছে এমন সব লোক ছুয়েছেন এমন সব স্থান ও জিনিস যেমন বৈদ্যুতিক বাতির সুইচ, দরজার হাতল, এতে হাত লাগলে তা ধুয়ে ফেললে বারবার সর্দির জীবানু সংক্রমণ হতে রক্ষা পাবে সহজে। ঘরে কোনও লোক অসুখ থাকলে কাপ, গ্লাস, টাওয়েল সব পয়পরিষ্কার রাখা উচিত।

টিপস: ঠান্ডা লাগলে, সর্দি হলে, কাপড়ের রুমাল ব্যবহার না করে ডিসপোজেল টিসু ব্যবহার করা উচিত। এতে হাত অনবরত পুন:সংক্রমণ থেকে বাঁচবে।

গলা খুসখুস, গলা ব্যথা

গলা খুসখুস, গলাব্যথা শীতকালে বেশ সচরাচর এবং প্রায়শ তা ভাইরাস সংক্রমণ। এমন তথ্য প্রমাণ আছে, তাপমাত্রার পরিবর্তন যেমন উষ্ণ ঘর থেকে হিমশীতল বাহিরে গেলে গলা খুসখুস এবং গলা ব্যথা হতে পারে।

টিপস: গলা খুসখুসের সহজ একটি নিদান হলো উষ্ণ লোনাপানি দিয়ে গড়গড়া করা। এতে  সংক্রমণ নিরাময় হয়না বটে তবে এর রয়েছে প্রদাহরোধী গুণ এবং উপশম করার মত গুণ।  কুসুম গরম একগ্লাস পানি এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন।

হাঁপানি

হিমশীতল বাতাসে হাঁপানি বাড়ে, শুরু হয় বুকে সাঁ সাঁ শব্দ ও শ্বাসকষ্ট। যাদের হাঁপানি আছে তাদের শীতকালে সতর্ক থাকা উচিত।

টিপস: খুব শীতল, হিমবাতাস যেদিন, সেদিন ঘরে থাকুন। যদি বাইরে যেতেই হয় তাহলে নাক ও মুখে স্কার্ফ বেধে নিন। নিয়মিত ওষুধ নেবেন। বিশেষ খেয়াল করতে হবে সেদিকে। জীবন রক্ষাকারী ইনহেলার রাখুন হাতের কাছেই।

ভাইরাস

শীতকালের খুব দুষ্ট ও সংক্রামক ভাইরাস, পাকস্থলী ভাইরাস। সারাবছর এর গতি অগ্রতিহত থাকে। শীতকালে বড় তীব্র হয়। হোটেলে ও বিদ্যালয়ে এর গতিবিধি বেশি। বড় অপ্রীতিকর অসুখ, দু’তিন দিন কষ্ট।

টিপস: অসুখ হয় বমি ও তরল মল, পানিশূন্যতা ঠেকাতে খেতে হয় প্রচুর পানি ও তরল। ছোট বাচ্চা ও বুড়োদের ঝুঁকি বেশি। মুখে খাবার স্যালাইন খেলে এসব সমস্যা ঠেকানো যায়।

বেদনার্ত হাড়ের গিট

যাদের আথ্রাইটিস আছে এদের অনেকেই অভিযোগ করেন, শীতকালে হাড়ের গিটগুলোতে ব্যথা খুব বাড়ে, কেন তা বাড়ে জানা নেই। হাড়ের গিটের সমস্যা যেমন ব্যথা ও নিশ্চলতা আবহাওয়াতে প্রভাবিত হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনে হাড়ের ক্ষতি বা গিটের ক্ষতি হয় এমন প্রমাণ নেই।

টিপস: অনেকে শীতের দিনগুলোতে কিছুটা বিষন্ন হয়ে পড়েন তাই এদের ব্যথা বেদনার অনুভব বেশি। সব কিছু খারাপ লাগে। এমনকি অসুখও। নিত্য দিন ব্যায়ামে শরীর ও মন ভালো হয়। সাতার কাটা উত্তম। হাড়ের গিটের জন্য আরো ভালো।

হিমক্ষত

আমাদের শরীর খারাপ বা চাপগ্রস্ত এমন হলেই হিমক্ষত হয় মনে করি আমরা। হিমক্ষতের কোনও নিরাময় নেই, তবে শীতে নিজের দেখভাল করলে একে ঠেকানো যায়।

টিপস: প্রতিদিন এমন সব কাজ করা উচিত যাতে মনে চাপ পড়ে কম, চাপ হয় কম, চাপ হ্রাস পায় যাতে যেমন উষ্ণ ধারা পানিতে গোসল, পার্কে হাটুন, নয়ত প্রিয় কোনও ছবি দেখুন হলে বসে।

হার্ট এ্যাটাক

শীতকালে হার্ট এ্যাটাকের ঘটনা বেশি হয়। শীতের ঝাপটায় বাড়ে রক্তচাপ, চাপ পড়ে হূদযন্ত্রের উপর। শীতকালে দেহতাপ রক্ষার জন্য হূদযন্ত্র আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।

টিপস: ঘরের ভেতর উষ্ণ গরমে থাকুন। শোবার ঘরে যেন তাপমাত্রা থাকে ২১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। গরম পানির বোতল বা ইলেকট্রিক ব্ল্যাংকেট ব্যবহার করা যায় শয্যা গরম থাকার জন্য। বাইরে যেতে হলে গরম কাপড় পরে যেতে হয়, পরুন মাথায় হেট, স্কার্ফ ও গ্লোবস্।

হিমশীতল হাত

শীতের আবহাওয়ায় হাতের আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুলগুলো অত্যন্ত বেদনার্ত হয়। আঙ্গুলগুলো প্রথমে সাদাবর্ণ হয় এর পরে নীল এর পর রক্তবর্ণ। দপদপ করতে থাকে। ঝিনঝিন করে। হাত ও পায়ের ক্ষুদ্র রক্তনালীতে রক্ত চলাচল কমে যায়। গুরুতর ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হতে পারে, তবে এই অষুখ নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।

টিপস: ধূমপান অবশ্য নয়। চা কফি ও ক্যাফিনও বর্জন। এতে বাড়ে উপসর্গ। সব সময় হাতে উষ্ণ মোজা পড়া, পায়েও মোজা ও জুতো পরা উচিত বিশেষ করে বাইরে যাবার সময়।

শুষ্কত্বক

সচরাচর শীতের সময় বাড়ে ত্বকের শুষ্কতা, আবহাওয়ায় আর্দ্রতা যখন কমে আসে। শীতকালে চাই আর্দ্রকরণ। ময়েশ্চারাইজিং। স্নানের পর বা শাওয়ারের পর ময়শ্চরাইজার লাগানো উত্তম। আবার শয্যা গ্রহণের আগে।

টিপস: উষ্ণ শাওয়ারের চেয়ে কুসুম গরম শাওয়ার ভালো। খুব গরম জল ত্বক আরো শুষ্ক ও চুলকানি হয়। চুলও শুষ্ক ও ফ্যাকাশে হয়।

শীতকালীন ফ্লু

ঋতুকালীন ফ্লূ ভঙ্গুর লোকের জন্য প্রাণসংশয়ী হতে পারে। ৬৫ উর্দূ লোক এবং যাদের ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ এদের ঝুঁকি খুব বেশি। তাই সিজন্যাল ফ্লু শট নেয়া উত্তম। সুরক্ষাও পাওয়া যায় ১ বছর।

 অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা
 ধন্যবাদ সবাইকে।

Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.

 
biz.